পরিসংখ্যানে দক্ষতা অর্জন যে কারণে প্রয়োজন

Table of Contents

“ড্যাটা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ” শব্দবন্ধটি কিছুদিন আগেও উন্নত বিশ্বে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। এখন সেখান থেকে আরো গভীরে গিয়ে আলোচিত হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এবং কিভাবে ড্যাটা থেকে প্যাটার্ন বের করে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজে লাগানো যায়। বলা হচ্ছে Big data is a big deal. অনেক লেখালেখি হয়েছে বিগ ড্যাটা কিভাবে ব্যবসা বাণিজ্যকে বদলে দেবে এবং আগামী দিনে কারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে সেসব নিয়ে। বলা হচ্ছে যারা ড্যাটার সর্বোত্তম ব্যবহার করবে তারাই এগিয়ে যাবে কিংবা তাদেরই টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশী হবে।

প্রশ্ন হলো এই প্রতিযোগিতায় আমরা কোথায় অবস্থান করছি। ব্যবসা বাণিজ্যে ড্যাটার ব্যবহার আমাদের দেশে সেভাবে এখনো শুরু না হলেও আগামি এক/দুই বছরের মধ্যে দ্রুত বেগে শুরু হবে বলে ধারণা করা যায়। বাংলাদেশে মোবাইলের ব্যবহার এবং মোবাইল ভিত্তিক সেবা, যেমন ব্যাংকিং, এখন ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এই ধারায় যুক্ত হচ্ছে মোবাইলে স্বাস্থ্য সেবা।

যদিও বাংলাদেশে ই-কমার্স সেভাবে বিস্তার লাভ করেনি যেভাবে এতদিনে বিস্তৃত হওয়ার কথা ছিল তবুও অল্পদিনের মধ্যেই ই-কমার্স জনপ্রিয় হবে বলে ধারণা করা যায়। কারণ এটি এখন সময়ের দাবি।

এখানে স্মরণ করা যেতে পারে বাংলাদেশের প্রথম ই-কমার্স সাইট মুনশিজি’র (munshigi.com) কথা। তখন ২০০২ বা ২০০৩ সাল হবে। আমাজন ডট কম-এর পরিচিতির ঢেউ বাংলাদেশেও এসে পৌঁছেছিল। মুনশিজি মাঝখানে হারিয়ে গেলেও আবার ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

আমরা বেশী দূরে না তাকিয়ে যদি ভারতের দিকেও তাকাই তাহলে দেখতে পাই ড্যাটাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে অনেক ই-কমার্স স্টার-আপ কোম্পানি এই স্পেসে নিজেদের অবস্থান করে নিতে পেরেছে। অথচ বাংলাদেশে আমরা ই-কমার্স এখনো সেভাবে চালু করতে পারিনি। পারিনি মানে এই নয় যে আমরা কখনোই পারবো না। বরং আগামীতে যা কিছু অগ্রগতি হবে তা হবে অসম্ভব দ্রুত গতিতে। এই গতি আনতেই হবে কারণ যারাই ধীরে চলবে তারাই পিছিয়ে পড়বে।

পরিসংখ্যানবিদদের তাতে কী আসে যায়?

উন্নত বিশ্বে মার্কেটিং-এ এনালিটিক্স এর ব্যবহার হচ্ছে হরদম। কোন্ ধরনের ক্রেতার কাছে কোন্ ধরনের বিজ্ঞাপন পৌঁছাতে হবে সেটি নির্ধারণ করছে প্রেডিক্টিভ মডেল। এসব মডেল মেশিল লারনিং এ্যালগরিদম ব্যবহার করে ক্রেতাদের শ্রেনীভাগ করছে যাকে এরা বলে কাস্টমার সেগমেন্টেশন। বাংলাদেশে যখন পুরোদমে মার্কেটিং এনালিটিক্স শুরু হবে তখন পরিসংখ্যানবিদদের চাহিদা বাড়বে।

বাংলাদেশে যদিও অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগের সুযোগ আগের দিনে অনেক সীমিত ছিল, ভবিষ্যতে তরুণ প্রজন্ম-দ্বারা পরিচালিত ব্যবসা বাণিজ্যে সাবজেক্টম্যাটার এক্সপার্ট তরুণরাই কাজ করবে বলে আমি মনে করি। এর কোন বিকল্প নেই।

তাহলে কীভাবে প্রস্ততি নিতে হবে?

আসছে দিনগুলোতে ড্যাটা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ব্যবসায় এনালিটিক্স-এর ব্যবহার বাড়বে। এ জন্য এসব ইন্ডাস্ট্রিতে দরকার হবে দক্ষ পরিসংখ্যানবিদ এবং ড্যাটা সাইন্টিস্ট। ড্যাটা সাইন্টিস্ট হওয়ার জন্য পরিসংখ্যানবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই তবে পরিসংখ্যানবিদদের জন্য ড্যাটা সাইন্টিস্ট-হওয়া অনেকটা সহজ। কারণ ড্যাটা সাইন্টিস্ট হলো পরিসংখ্যান, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, শৈল্পিক আইডিয়া এবং বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান-এসবের সমাহার।

পরিসংখ্যানের ছাত্রছাত্রীরা এই দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। তবে এগিয়ে থাকবে সেই আনন্দে বসে থাকলে চলবে না। উৎসাহী এবং পরিশ্রমী যে কেউই এই দৌড়ে জয়ের সামর্থ রাখে। যারা পরিসংখ্যানের ছাত্রছাত্রী, তাদেরকে পরিসংখ্যান ব্যবহার করার চর্চা করে যেতে হবে। অর্থাৎ শুধু প্রথাগত জ্ঞান অর্জন নয়, সেই অর্জিত জ্ঞানের ব্যবহার করা শিখতে হবে।

কিন্তু বাংলাদেশে তো সেভাবে কিছু করার সুযোগ নেই!

সেটা সত্যি। তবে এ জন্য তো আর আত্মউন্নয়নকে বসিয়ে রাখা যাবে না। ইন্টারনেটের যুগে এখন সব জ্ঞান হাতের মুঠোয়। দরকার একটুখানি সদিচ্ছা, নিরলস প্রচেষ্টা আর অধ্যাবসায়।

আমি বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করার জন্য লেখালেখি শুরু করেছি। আগের একটি লেখায় আমি বলেছি আমাদের পরিসংখ্যানবিদদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আগামীতে প্রজেক্টভিত্তিক লারনিং এর একটা উদ্যোগ আমি দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা করছি। সেখানে বিনা খরচে আমি আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের মেন্টর করতে চাই। এর একটি রূপরেখা শীঘ্রই প্রকাশ করবো ইনশা-আল্লাহ।

এই উদ্যোগে আপনি নানা ভাবে যুক্ত হতে পারেন। প্রথমত, নিজে এই উদ্যোগে একজন শিক্ষার্থী হয়ে, দ্বিতীয়ত পরামর্শ প্রদান করে, এবং তৃতীয়ত আপনার বন্ধুকে আপনার অগ্রযাত্রায় সাথী হিসেবে নিয়ে। আপনার যেকোন পরামর্শ মন্তব্যে জানাতে ভুলবেন না।

ধন্যবাদ।

comments powered by Disqus