বাংলাদেশে পরিসংখ্যানবিদদের ভবিষ্যৎ
একটা বিষয় আমাকে আশাবাদী করে যখন দেখি আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা পরিসংখ্যানে পড়াশুনা করছে এবং তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন বাদে সবাই ডিগ্রী শেষ করছে। স্নাতক পর্যায়ে আমাদের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই পরিসংখ্যান পড়ানো হয়। সে হিসেবে প্রতি বছর আনুমানিক ২-৪শ’র মতো ছাত্রছাত্রী পরিসংখ্যানে স্নাতক অর্জন করে। সংখ্যাটি একেবারে কম নয়।
আমি দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় ফেইসবুকে সময় দেই। এর অন্যতম উদ্যেশ্য আমাদের নতুন-পুরাতন ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যুক্ত থাকা। একটা সময় ছিল যখন শুধু পরিসংখ্যানের কেউ হলেই তাকে আমি ফ্রেন্ড হিসেবে যুক্ত করতাম। এখনো করি তবে এখন পরিসংখ্যানের বাইরেও বন্ধু-সার্কেল বেড়েছে।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা বড় সীমাবদ্ধতা হলো অর্জিত শিক্ষাকে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করার পরিসর অনেক ছোট। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা অনুপস্থিত। যদিও বিসিএস ক্যাডারে পরিসংখ্যানের একটা ক্যাডার আছে, কিন্তু সেটি প্রকৃতপক্ষে পরিসংখ্যানের ছাত্রছাত্রীদের খুব একটা আকৃষ্ট করে বলে আমার মনে হয়নি কখনো। বাস্তবতার নিরীখে বলা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অন্যান্য বিষয়ের মতো পরিসংখ্যানের ছাত্র-ছাত্রীরাও সম্পূর্ণ ভিন্ন কোন ফিল্ডে কর্মজীবন শুরু করে।
আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় দেখেছি যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভালো ফলাফল করে অর্থাৎ প্রথম শ্রেনীতে উপরের দিকে অবস্থান করে বা জিপিএ ৩.৮ বা তার উপরে থাকে, তারা শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। অন্যভাবে বলা যায় তাদের জন্য পরিসংখ্যানের সাথে জড়িয়ে থাকাটা বেশ খানিকটা সহজ হয়।
অল্প সংখ্যক পরিসংখ্যানবিদদের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করার সুযোগ থাকলেও একটা বিরাট অংশই পরিসংখ্যান থেকে দূরে সরে যায়। এটি প্রকৃতপক্ষে সময় এবং মেধার এক বিশাল অপচয়। এই বিরাট অংশের ভগ্নাংশও যদি পরিসংখ্যানের সাথে সম্পৃক্ত রাখা যেতো তাহলে এদের মধ্যেই অনেকেই অনেক ভালো করতো বলে আমি বিশ্বাস করি।
এই অপচয় রোধ করার সহজ কোন উপায় নেই যা দেশে ব্যক্তিপর্যায়ে সৃষ্টি করা যায়। অথচ উন্নত বিশ্বে পরিসংখ্যানবিদদের ঘাটতি হবে বলে নানা গবেষণায় দেখানো হচ্ছে।
গ্লোবালাইজেশনের যুগে সেদিন দূরে নয় হয়তো বাংলাদেশে বসেই পরিসংখ্যানবিদগণ আমেরিকার কোন একটি কোম্পানীর কাজ করে দিবে। ভারত সেটি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। আমরা ভারতের চেয়ে এদিক থেকে অন্তত ৪/৫ বছর পিছিয়ে আছি। তবে আশার কথা সরকার এখন আইটি-ক্ষেত্রে অনেক জোর দিচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে আমরাও পারবো এনালিটিক কাজগুলো দেশ থেকে সম্পন্ন করতে।