উইনিং লিংকডইন প্রোফাইল বা রেজুমে যেভাবে বানাবেন

Table of Contents

উইনিং লিংকডইন প্রোফাইল বানানোর অনেক লেখা ইন্টারনেটে আছে। সে কারণে এ বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লেখার কোন ইচ্ছে ছিলনা। কিন্তু দেখছি আমাদের ছেলেপেলেরা এসব লাইনে আসলেই অনেক পিছনে। কেন সেটা বলছি। তার আগে বলে নেই লেখাটিকে কোন প্রফেশনাল রেজুমে রাইটারের মতামতে হিসেবে না নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন হিসেবে দেখতে হবে। একেবারে নভিসদের জন্য লিখেছি। তাই যারা ইতোমধ্যে জানেনে কিভাবে উইনিং রেজুমে বা লিংকডইন প্রোফাইল লিখতে হয়া তারা এখান থেকে নতুন কিছু নাও পেতে পারেন।

প্রোফাইল কেন দরকার

প্রোফাইল হলো আপনার প্রফেশনাল বা পেশাদারী পরিচিতি। প্রোফাইলের মাধ্যমে একজন অপরিচিত ব্যক্তি (গবেষক, চাকুরিদাতা কিংবা রিক্রুটার) আপনার সম্পর্কে এক নজরে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারবে যে তথ্যগুলো আপনার পেশাদারী দ্ক্ষতা সম্পর্কে সেই ব্যক্তিকে ভালো ধারণা দিবে।

আপনি কি প্রোফাইল দরকার? প্রোফাইল তাদের অবশ্যই থাকা দরকার যারা

  • এই মুহূর্তে ছাত্র কিন্তু ১-২ বছরের মধ্যেই চাকুরীর বাজারে নামবেন, কিংবা
  • য ারা ইতোমধ্যেই চাকুরী করছেন, কিংবা
  • শুধুই নেটওয়ার্কিংএর জন্য

প্রোফাইলের সমস্যাগুলো

প্রায়ই নেটওয়ার্কিং এর জন্য অনেকের কাছ থেকে লিংকডইনে রিকোয়েস্ট পাই। আমি নানা সময়ে চাকুরী কিংবা গবেষণা বিষয়ক পোস্ট করি বা শেয়ার করি যা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের কাজে লাগতে পারে। সে জন্য আমি চাই ছেলেপেলেরা আমার সাথে যুক্ত থাকুক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের প্রোফাইল দেখে আমি হতাশ হই। ফলে তাদের অনেককে আমি যোগ করি না। এর কারণ হলো আমার সাথে যুক্ত হওয়ার পরে লিংকডইন তার এলগরিদম ব্যবহার করে সেই ব্যক্তিকে আমার সাথে যুক্ত অন্য একজনের সাথে তাকে যুক্ত হতে পরামর্শ দিবে। সেটি আমার জন্য বিব্রতকর হতে পারে।

প্রোফাইলে কী কী ঠিকঠাক থাকা দরকার তার একটি তালিকা দিচ্ছি। যেমন–

নাম ঠিক মতো না লেখা

এরকম প্রোফাইল আমি প্রায়ই ডিনাই করি যেখানে নাম লেখা থাকে সব বড় হাতের অক্ষরে। যেমন কেউ নাম লিখেছ MAHBUB KAHN 1. টেকনিক্যালি এতে কোন সমস্যা নেই। তবুও ইনিশিয়াল-ক্যাপ স্টাইলে লিখলে সেটি পড়তে আরাম হয়। দেখুন এভাবে লিখলে কেমন লাগে — Mahbub Khan. এটি পড়তে সহজ হয়। এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? এর মাধ্যমে আপনার কমিউনিকেশনে দক্ষতা, অর্গানাইজেশন, সিরিয়াসনেস — অনেককিছু সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরী হতে পারে।

কী করেন সেটির উল্লেখ না থাকা

এটি অনেক বড় একটি সমস্যা। অনেকের প্রোফাইল তন্য তন্য করে খুঁজেও আমি বুঝতে পারিনা তিনি কোন বিষয়ের ছাত্র/ছাত্রী বা তার দক্ষতা কিসে। এটি গুরুত্বপূর্ণ নয় কি? আপনি নিজের প্রোফাইল তৈরী করেছেন অথচ কোথাও লেখা নেই আপনি কোন বিষয়ে দ্ক্ষ। আপনি ছাত্র হলে হয়তো ভাবছেন Student লিখলেই হয়ে যাবে।

না হবে না।

Student দ্বারা কিছুই বোঝা যায় না। ভালো হবে Student of [বিষয়] এভাবে লিখলে। যেমন Student of Statistics –এটি অনেক তথ্যবহুল।

এই একটি কারণেই আমি অনেককে এক্সেপ্ট করি না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম

বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম তাদের অফিসিয়াল নাম ব্যবহার করে লিখুন। ইংরেজীতে লিখুন; বাংলা শব্দকে রোমান হরফে নয়। অনেকেই লেখেন ঢাকা ভিসওয়াবিদিয়ালয় (ইংরেজীতে)। এটি আমার মতে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল নাম ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা (University of Dhaka) যেটি আপনাদের সার্টিফিকেটের উপর লেখা থাকে। লিংকডইন একটা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরম–সেটি মাথায় রাখা ভালো। যদিও আপনার প্রোফাইল এই মুহূর্তে দেশের বাইরের কেউ দেখবে না তবুও দীর্ঘমেয়াদের কথা চিন্তা করে এখনই সেভাবে তৈরী করুন। আর এমনটা ভাবছেন কেন যে আপনার প্রোফাইলের স্কোপ এত লিমিটেড হবে? এখন থেকেই বড় করে ভাবতে শিখুন।

অভিজ্ঞতা

যারা জব করেন তাদের জন্য এটি কোন সমস্যা নয়–তারা তাদের জবের টাইটেল এবং সময়কাল এবং বর্ণনা লিখবেন। সমস্যা হয় ছাত্রছাত্রীদের। তারা এখানে তাদের পড়াশুনার অভিজ্ঞতা লেখে। সেটি হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু আমার মতে পড়াশুনার টাইটেলগুলো Education সেকশনে লেখা বেশী উপযোগি। অভিজ্ঞতার জায়গায় উল্লেখযোগ্য কাজের বর্ণনা দিতে পারেন। যেমন

  • কোথাও রিসার্চ এসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করে থাকলে
  • কোথাও ক্লাস নিয়ে থাকলে বা পড়িয়ে থাকলে
  • কোন কনসালটেন্সি করে থাকলে (এমনকি অবৈতনিক হলেও)
  • নিজে কোন প্রতিষ্ঠান তৈরী করে থাকলে

পাবলিকেশন, ভলান্টারি কাজকর্ম

খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শখের কথা লিখতে কখনও কার্পণ্য করবেন না। পেশাদার কাজের বাইরেও আপনার একটি জীবন আছে এবং সেখানে কিছু শখ আছে। সেগুলোর মধ্যে যেগুলো প্রকাশ করার মতো সেগুলো প্রকাশ করলে ক্ষতি নেই। অনেক সময় বরং লাভ আছে 2। এই তথ্যগুলোর মাধ্যমে যারা আপনার প্রোফাইল পড়ছে তাদের মনে নানা কৌতূহল সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে এক ধরনের আগ্রহও তৈরী হতে পারে বিশেষ করে যদি তাদের শখ আপনার শখের কাছাকাছি হয়। কাছাকাছি না হলেও কোন ক্ষতি নেই।

রেজুমে-তে জন্ম তারিখ

এটি হরিবল একটা আইডিয়া। ব্যাপারটা বাংলাদেশে চলনসই হলেও যে রেজুমে বিদেশে দিবেন বা বিদেশের কারো সাথে নেটওয়ার্কিং এর জন্য দিবেন সেখানে দয়া করে জন্মতারিখ, বাবা মায়ের নাম, উচ্চতা, ধর্ম, ইত্যাদি কোন ভাবেই দিবেন না। এটি খুবই এমবেরাসিং একটা ব্যাপার। আমি আমেরিকা, কানাডার কথা বলতে পারি। এখানে কারো রেজুমেতে এসব থাকলে সেই রেজুমে অনেকে দেখতেই চাইবে না। উন্নত অন্য দেশেও একই হবে বলে ধারণা করি।

কোন বিদেশী প্রতিষ্ঠানে রেজুমে দিলেও এই তথ্যগুলো বাদ দিয়ে দিবেন।

যোগাযোগের ঠিকানা

যোগাযোগের জন্য একটি মাত্র ইমেইল ব্যবহার করুন। আপনার হয়তো ৩টি মোবাইল নাম্বার আর ৬টি ইমেইল ঠিকানা থাকতে পারে। কিন্তু একটি মাত্র থাকবে যেটি সবথেকে কাজের। মনে রাখবেন মিষ্টি ৬টা খেলেও প্রথমটিই কিন্তু সবচেয়ে মিষ্টি লাগে। বুঝতে পারছেন হয়তো কী বলতে চাইছি।

ইমেইলটি প্রতিনিয়ত চেক করুন। আপনি মেসেজে সবসময় এভেইলেবল অথচ ইমেইল দিলে রিপ্লাই করেন না, এরকম না করা ভালো। কেননা এখনো গবেষক বা চাকুরীদাতারা ইমেইলকেই যোগাযোগের সবচেয়ে ভালো এবং কনভিনিয়েন্ট মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন বলে আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি।

শেষ কথা

আশা করি লেখাটি কাজে লাগবে। আপনার যদি কোন পরামর্শ থাকে সেটি মন্তব্যে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

Categories: Blog
Tags:
comments powered by Disqus